Saturday, February 1, 2014

চাঁদনী রাত , গলে গলে পড়ছে জোস্না , চারদিক নীরব এমনকি ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ পর্যন্ত নেই ।

(পরী মণি)


চাঁদনী রাত , 
গলে গলে পড়ছে জোস্না , 
চারদিক নীরব এমনকি ঝিঁঝিঁ 
পোকার শব্দ পর্যন্ত নেই ।
বড় বড় কাঁশফুলের গাছ , 
সাদা সাদা কাঁশফুলের রাজত্ব চারপাশে , 
যতদুর চোঁখ যায় কেবল সাদা আর সাদা । 
শুদ্ধতার , পবিত্রতার সীমাহীন এক স্বর্গীয় অনুভুতি 
আবিরের মনে দোলা দিয়ে যাচ্ছে বারবার ।

জায়গাটা ওর কাছে খুবই পরিচিত মনে হচ্ছে 
কিন্তু আগে কখনো এসেছে বলে মনে হচ্ছে না ।
কাঁশবাগানের ভিতর দিয়ে সরু একটা পথ 
চলে গেছে এঁকেবেঁকে সেই পথ ধরেই হেঁটে যাচ্ছে আবির , 
যদি অনন্তকাল ধরে এ পথে হাঁটা যেত , 
যদি এসময় পরী মণিও সাথে থাকতো কতইনা ভালো হত ! 
পরীমণির কথা মনে পড়তেই মামার মন খারাপ হয়ে গেল ।

মামা অষ্টম শ্রেনীতে পড়ে , 
পরীমণি ওর ক্লাসমেট । 
পরীমণির বাবা সরকারী ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা , 
ঢাকা থেকে বদলি হয়ে তিনি এই মফস্বল শহরে এসেছেন । 
তাই পরীমণিকেও বাধ্য হয়েই এই স্কুলে ভর্তি হতে হয়েছে । 
পরীমণি খুবই মেধাবী ছাত্রী 
ঢাকার এক নামকরা স্কুলেই ওর রোল ছিল এক ।
পরীমণি আসার আগে মামা ছিল ক্লাসের সেরা ছাত্র ,
কিন্তু যখন ১ম সাময়িকের রেজাল্ট বেরুল 
তখন সবার চোঁখ কপালে উঠে গেল ! 
কারন প্রতিটি সাবজেক্টেই পরীমণি ৯৫ এর উপর নাম্বার পেল ! 
আর অংকে পেল ১০০ তে ১০০ ! 
মামা ভাবতেই পারেনা অংকে কেউ ১০০ পায় কি করে ! 
ও কখনো ৬০ এর উপর পায়নি , আর এবার পেয়েছে ৫৮ ।

পরীমণি মেয়েটা দেখতেও ছিল পরীমণির মত , 
ক্লাসের সবার সাথেই ওর ভালো সম্পর্ক একমাত্র মামা ছাড়া । 
মামা কিছুতেই পরীমণিকে সহ্য করতে পারছিল না ।
কারন ওর মান সম্মান একেবারে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে মেয়েটা ! 
এতদিন ও ছিল সেরা ছাত্র স্যাররা সবাই ওকে আদর করতো , 
কিন্তু এখন ঐ মেয়েটা কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে !

মামা কথা না বললে কি হবে পরীমণি কিন্তু 
সেধেসেধেই মামার সাথে কথা বলতো , 
প্রথম প্রথম ও উত্তর দিত না কিন্তু 
পরীমণি এমন সুন্দর করে কথা বলে জবাব না দিয়ে থাকা যায় না ।
মামার মাঝে মাঝে ভাবে এত সুন্দর করে কথা বলে কিভাবে মেয়েটি ! 
ও আয়নার সামনে দাড়িয়ে কয়েকবার চেষ্টা করেছিল 
পরীমণির মত করে কথা বলতে 
কিন্তু নিজের কথা শুনে নিজেরই হাসি পেত !

মামা ধীরে ধীরে পরীমণির প্রতি দুর্বল হতে লাগলো , 
মামার ধারনা ছিল পরীমণিও মনে হয় তার মত করেই ভাবছে ।

২য় সাময়িক পরিক্ষার কিছুদিন আগে মামা জানতে পারলো 
পরীমণির বাবা আবার ঢাকায় বদলি হয়ে গেছে । 
কয়েক দিনের মধ্যেই ওরা চলে যাবে ।

মাা একসময় যে পরীমণির সাথে কথা বলতোনা 
এখন সেই পরীমণি চলে যাবে শুনে 
ওর নাওয়া খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে ।

মামা : তুমি নাকি ঢাকায় চলে যাচ্ছ ?
পরীমি : হ্যা , বাবা বদলি হয়ে গেছেতো তাই ।
তুমি নিশ্চয় খুব খুশি , তোমার রোল আবার এক হবে ।

মামা চোঁখ দুটি টলমল করতে লাগলো , 
আবার একটা মেয়ের সামনে ও প্রায় কেঁদে দিচ্ছে 
এটা ভেবে লজ্জাও পাচ্ছে ।
শেষ পর্যন্ত লজ্জারই জয় হল ! 
ও কোন রকমে কাঁন্না আটকাল ।
তারপর পরীমণির হাতে একটা কাগজ দিয়ে দৌড়ে পালাল ।

ভালো ছাত্রী পরীমণি ,

তুমি অনেক সুন্দর , 
তোমার কথাগুলো আরও সুন্দর । 
এত সুন্দর করে কেউ কথা বলতে পারে আমি জানতাম না ।
তোমাকে আমার অনেক ভালো লাগে , 
তুমি যদি আমার চেয়ে খারাপ ছাত্রী হতে 
তাহলে তোমাকে আমি "I love you" কথাটা বলতাম । 
কিন্তু তুমি পড়ালেখায় আমার চেয়ে অনেক অনেক ভালো তাই 
"I love you" বলতে আমার লজ্জা লাগে । 
তাছাড়া তোমরা শহরে থাক আর অনেক সুন্দর করে কথা বল । 
কিন্তু তুমি খুব ভালো মেয়ে ।
ইতি
খারাপ ছাত্র মামা ।

দাড়াও ! দাড়াও ! আরেকটা কথা বলতে ভুলে গেছি । 
আমি যে তোমাকে এই চিঠিটা দিয়েছি কাউকে বলনা , 
তাহলে সবাই আমাকে খারাপ মনে করবে । ।

আগামীকাল পরীণি চলে যাবে , 
মামার সাথে আজই ওর শেষ ক্লাস 
কিন্তু এই কয়দিনে চিঠির বিষয়ে 
মামার সাথে পরীমণি কোন কথাই বলেনি ।
ক্লাস শেষে পরীমণি সবার কাছ থেকে বিদায় নিল 
তারপর মামার সাথে কিছুক্ষন কথা বলল . .

পরীমণি: ভালো থেকো মামা , 
কাল আমরা চলে যাচ্ছি । 
এখন আমাদের পড়ালেখা করার সময় , 
আমার আব্বু আম্মু চায় আমি যেন ডাক্তার হই , 
তাই আমাকে ভালোভাবে পড়াশুনা করতে হবে । 
আর তুমিও খুব ভালো ছেলে 
চেষ্টা করলে অনেক ভালো রেজাল্ট করতে পারবে ।
তাহলে ঢাকায় গিয়ে ভালো কলেজে পড়তে পারবে 
তখন হয়ত আমার সাথে আবার দেখা হয়ে যেতে পারে ।
মামা মনে মনে ভাবছে কি সুন্দর করে 
কথা বলছে মেয়েটা , কত কিছু নিয়ে ভাবছে । । ।

মামা পরীমণির কথা ভাবছে আর সেই সরু পথ ধরে হেঁটে যাচ্ছে , 
পরীমণির সাথে কাটানো সময়গুলোর কথা বারবার মনে পড়ছে ।
হঠাত্‍ করে কাঁশবনে দমকা হাওয়া বইতে শুরু করলো ! 
হাজার হাজার জোঁনাকী কোথা থেকে এসে জুটেছে পুরো কাঁশবন জুড়ে ! 
হঠাত্‍ ও খেয়াল করলো আকাশ থেকে একটা 
আলোর ছটা ক্রমশ ওর দিকে এগিয়ে আসছে ! 
কাছে আসতেই ও চিত্‍কার দিয়ে বলে উঠলো পরীমণি তুমি ? ? 
পরীমণি কোন কথা বললনা , 
যখনি ও পরীমণিকে ছুতে চাইল ওমনি পরী আকাশে মিলিয়ে গেল ! ! 
আর সাথে সাথেই মামার ঘুম ভেংগে গেল ।

পরীমণি ঢাকা চলে গেছে প্রায় তিন মাস হল , 
তারপর থেকে মামার প্রায় প্রতি রাতেই এই স্বপ্নটা দেখে ।
কিন্তু আজ মামার একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে । 
এভাবে স্বপ্ন দেখে আর না , 
"স্বপ্নের পরীমণিকে হয়ত ছোয়া যায় না 
কিন্তু বাস্তবের পরীমণিকে ছোয়া যায় , 
অন্তত চেষ্টাতো করা যায়"

আজ থেকে ও আরও ভালোভাবে পড়াশুনা করবে 
"নিজের জন্য , পরীমণিকে ছোয়ার জন্য"
-ব্লগার টিপু মামা-













No comments:

Post a Comment