Wednesday, January 22, 2014

রোমান্টিক গল্প
" ভালবাসি ভালবাসি "
-ব্লগার টিপু মামা-

জ্যাকসন হাইটস যাবো, ভাবছি গাড়ি নেবো না ট্রেনে যাবো ? ট্রেনেই যাই আজ, ট্রেন যাওয়া হয় না অনেকদিন|সিদ্ধান্ত নিয়ে টিকেট কাটলাম |

ট্রেন উটে যতারিতি বাঙালি চেহারা দেখতে পেলাম না| সব সাদারা , কিছু কিছু কালো ও আছে তবে কম |

সামনের একটা স্টেশন কিচুক্কন থেমে ট্রেন আবার চলতে শুরু করলো| ত্রিশ ডিগ্রী এঙ্গেলে সামনের সিটে একটা বাঙালি চেহারার এক মেয়ে বসে আছে দেখতে পেলাম, মনে Holo এই মাত্র থেমে যাওয়া স্টেশন থেকে উটেছে |বাঙালি না হয়ে ভারতী হতে পারে | আমি আর সামনের দিকে না থাকিয়ে চোখ বুজে হালকা ভাবে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম |

কিছুক্ষণ পর পাশের সিটে বসে পড়ল কেউ এমনটা অনুভব করলাম| চোখ খুলে পাশে থাকাতেই দেখতে পেলাম সেই মেয়েটি |
আমি কিছু বোঝে উটার আগেই মেয়েটি বললো : আপনার নাম জুয়েদ তাইনা ?
:জ্বি , আপনি?
: তিশা
: আপনাকে তো চিন্তেপারলাম না| অবাক হয়ে বললাম|
: আপনি আমাকে চিনবেন না , আমি আপনাকে চিনি , আপনার ফেইসবুকে ছিলাম অনেক দিন|
: ছিলেন , এখন নেই ?
: না
আমি বললাম , ও আচ্ছা , নেই কেন কোন সমস্যা ?
:জ্বি. অনেক সমস্যা , আপনাকে চ্যাটে অনেক দিন হাই , হ্যালো বলে ও কোন উত্তর পাইনি , তাই বাধ্য হয়ে আপনাকে আনফ্রেন্ড করতে হয়েছে |
আমি বললাম , আসলে আমি চ্যাট করিনা করতে পারিনা ,২/৩মিনিটের বেশি থাকতে পারিনা আবার উত্তরের জন্য অপেক্ষা করে থাকা এটাও করতে পারিনা , আমার এফবি ফ্রেন্ড সবাই প্রায় এটা জানেন , আমার সব কথা হয় স্টেটাস আর কমেন্টে |
: আপনার স্টেটাস গুলা হয় বিরহমূলক
: যেমন?
: এই যে কয়েকদিন আগে লিখলেন

"তোমর বাড়ির পাশের বাড়ি আমার
আমার পাশের বাড়ি তোমার
তবুও হয়না দেখা
আজন্ম আমরা থাকি একলা একা"

: এ স্টেটাস এর সাথে আপনার কি সম্পর্ক ? বললাম আমি|
একটু চুপ থেকে মেয়েটি বলল: আমার জীবনের সাথে এটা মিলে গেছে |
আমি অবাক হয়ে বললাম: কেমন করে? খোলে বলুন তো ?

এক পলক চোখের দিকে তাকিয়ে , চুপ করে রইলো তিশা| আনমনে কথা বলছে এমন ভাবে বলল : আমার পাশের বাসায় একটা ছেলে থাকে,ওর নাম সজল, আমি ওকে খুব পছন্দ করি কিন্তু আমাদের কাজের সিডিউল এর কারণে দেখা হয়না, আমি যখন কাজে যাই ও থাকে ঘুমে, আমি যখন কাজ থেকে ফিরি তখন ও থাকে কাজে| আমি বললাম: সজল কে কি আপনি ভালবাসেন ?
: জ্বি
:বলেছেন থাকে?
: হাঁ,
: সে কি বলল?
: সে আমায় ভালোবসেনা| তিশার চেহারাতে বেদনা দেখতে পেলাম|আমি বললাম সত্যিই কি সে আপনাকে ভালবাসেনা? এটা কনফর্ম হয়েছেন?
: হাঁ , থাকে ভালোবাসি বলার পর সে সুজাসুজি না করে দেয় | আজ এক বছর প্রায় এরপর থেকে তার সাথে দেখা হয়না, আর আমি ও লজ্জায় তার সাথে দেখা করিনা ইচ্ছে করে|
আমি কি বলব বোঝতে পারছিলাম না| একটু চুপ থেকে তিশা কে বললাম: একটা কাজ করতে পারবেন?
তিশা বলল : কি কাজ বলুন|
: আপনি একদিন সময় বের করে সজলের সাথে দেখা করবেন, এবং বলবেন যে, আপনি থাকে ভালবাসেন না| এটা তার সাথে মজা করেছেন|
: এতে কি উপকার হবে আমার?
: আর কিছু না হউক, নিজের কাছে যে লজ্জায় মরছেন সেটা থেকে তো বাঁচবেন| বলে আমি একটু হাসার চেষ্টা করলাম |

সামনেই জামাইকা স্টেশন | তিশাকে বললাম : আমি সামনের স্টেশনে নেমে পড়ব , আমাকে আবার জ্যাকসন হাইটসের "ই "ট্রেন ধরতে হবে |
তিশা বলল: আচ্ছা তাহলে দেখা হবে| আমি বিদায় নিয়ে চলে এলাম |

মাস তিনেক পর আমি আমার কয়েকজন বন্ধু মিলে জ্যাকসন হাইটস প্রাইম রেস্টরেরেন্টে বসে আড্ডা দিচ্ছি| কে এক জন ডাক দিল : জুয়েদ ভাই এই টেবিলে আসেন| আমি চেয়ে দেখি তিশা হাত নেড়ে আমায় ডাকছে | সাথে একটা ছেলে বসা| আমার দুই টেবিল পরে ওরা বসেছিল| গেলাম |
বললাম: কি তিশা কেমন আছ?
তিশা বলল: ভালো আছি| ওর নাম সজল , বলে পাশে বসা ছেলেটাকে দেখালো| আমি সজলের সাথে হাত মিলালাম| সজল আমায় বসতে বলল, আমি তাদের সামনা সামনি চিয়ারটায় বসলাম| তিশা বলল: জুয়েদ ভাই আপনার পরামর্শে কাজ হয়েছে|
: যেমন ?
: আমি যখন সজল কে বলি ফান করেছিলাম সত্যি ভালবাসিনা, সে তখন কিছু বলেনি মুখ কালো করে চলে গেছিল| অমা পরদিন দেখি ওর আম্মুকে নিয়ে আমাদের বাসায় হাজির| সরাসরি আমার আম্মুর কাছে ওর আম্মু আমাদের বিয়ের প্রস্তাব দেন| আমাদের পরিবারের সবাই রাজি হয়ে যান| এখন আমরা দেশে গিয়ে বিয়ে করব| তাই কিছু বাজার করতে জ্যাকসন হাইটস এসেছি|
অনেক লম্বা কথা বলে তিশা হাসছিল| তার চোখে মুখে খুশির আভা চড়িয়ে পরেছে দেখতে পেলাম| মনে মনে বললাম, সজল তিশাকে ফিরিয়ে দিয়ে যে অপমান করেছিল ফান করেছি কথাটা শুনে অপমান টা ভালবাসায় পরিনিত হয়েছে|

তাদের কে সুন্দর জীবনের সাধুবাদ জানিয়ে আমি বাহিরে চলে এলাম| আর ভাবলাম মানুষ তার অনুগত মানুষ কে হারাতে চায়না|

( গল্পের পটভুমি নিউ ইয়র্ক )-ব্লগার টপু মামা-













No comments:

Post a Comment